বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই খাদ্য যদি সঠিক পরিমাণে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করা না হয় তা হলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- খাবার যদি শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি খাওয়া হয় তা হলে শরীর মোটা হয়ে যাবে। আবার যদি শরীরের চাহিদার চেয়ে খাবার কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর শুকিয়ে যাবে। এছাড়া একই খাদ্য যদি প্রতিদিন খাওয়া হয় তা হলে সেই খাবার কিছুদিন পরে আর খেতে ভালো লাগবে না। তাই প্রতিদিনের খাদ্য হওয়া চাই শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত, পুষ্টিকর ও একঘেয়েমিমুক্ত এবং রুচিকর। খাদ্যকে সুষম করতে হলে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি এই ছয়টি পুষ্টি উপাদানই উপযুক্ত অনুপাতে অর্থাৎ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমান থাকা প্রয়োজন। এসব খাদ্য উপাদান আবার বিভিন্ন প্রকার খাদ্যে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে। কোনো খাদ্যে একটা আবার কোনো কোনো খাদ্যে একাধিক পুষ্টি উপাদান থাকে। সুষম খাদ্য প্রস্তুত করতে হলে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে খাদ্য নির্বাচন করে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাই পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণ খাদ্যগুলোকে কয়েকটি মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। এই প্রতিটি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত খাদ্যগুলোতে পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্যতার পরিমাণ প্রায় একই। অর্থাৎ একটা খাদ্যশ্রেণিতে যে খাদ্যগুলো থাকে সেই খাদ্যগুলো থেকে প্রায় সমপরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যাবে, তাই একই শ্রেণির একটা খাদ্যের পরিবর্তে সেই শ্রেণির অন্য একটা খাদ্য খাওয়া যাবে। এতে করে পুষ্টির প্রাপ্যতা ঠিক থাকবে খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্যও আসবে। এভাবে খাদ্যের মৌলিক শ্রেণিগুলো থেকে খাদ্য গ্রহণের ফলে অতি সহজেই প্রতিটি খাদ্য উপাদান বা পুষ্টি উপাদানগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যায়।
দৈহিক পুষ্টি ও পরিশ্রমের জন্য প্রতিদিন খাদ্যের প্রয়োজন হয়। একজন সুস্থ-সবল ব্যক্তির কী পরিমাণ খাওয়া দরকার, কতটুকু খাবার খেলে শরীর সুস্থ রাখা যাবে, মোটা হওয়া রোধ করা যাবে, আবার শরীর শুকিয়ে যাবে না, খাদ্যদ্রব্যের কোনটি কী পরিমাণে গ্রহণ করলে দেহে খাদ্য উপাদানের অনুমোদিত চাহিদা পূরণ করা যায় তা নির্ণয়ের জন্য সমস্ত খাদ্যকে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। খাদ্যের উপাদান এবং দেহে খাদ্যের কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে সব শ্রেণির খাদ্যের সমন্বিত সুষম খাদ্য পরিকল্পনা করার জন্য খাদ্যসমূহকে কতগুলো মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এদেরকে মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী বা মৌলিক খাদ্যশ্রেণি বলে।
মৌলিক খাদ্যশ্রেণিগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণের ফলে সহজে সুষম খাদ্য গ্রহণ সম্ভব হয়, এর ফলে দেহের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিসাধন ঘটে।
মৌলিক খাদ্য শ্রেণিগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ | সুষম খাদ্য গ্রহণ (দেহের চাহিদা অনুযায়ী সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়) | দেহের যথাযথ পুষ্টি সাধন (সুস্থ দেহ গঠন) |
মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয়তা
কাজ ১- সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য মৌলিক খাদ্য শ্রেণির ভূমিকা লেখো। |
পূর্বের পাঠে আমরা মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী কী এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জেনেছি। এই পাঠে জানব বিভিন্ন ধরনের খাদ্যকে কয়টি মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠীতে বা মৌলিক খাদ্য শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যকে ৫টি মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। নিচের ছকে এই গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত খাদ্যগুলোর নাম এবং প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-
নিচে মৌলিক শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত খাদ্যগুলোর নাম ও প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদানগুলো দেওয়া হলো
মৌলিক খাদ্যশ্রেণি | খাদ্যের নাম | প্রাপ্ত পুষ্টি উপাদান |
শস্য জাতীয় খাদ্যশ্রেণি (শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য-শ্রেণি) | ভাত, রুটি, সুজি, সেমাই, নুডলস্, আলু ইত্যাদি | খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন বি,, ভিটামিন বি2 |
শাকসবজি ও ফল জাতীয় খাদ্যশ্রেণি (রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্যশ্রেণি) | বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল ইত্যাদি | সেলুলোজ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যারটিন, ফলিক এসিড, বিভিন্ন খনিজ পদার্থ- ক্যালসিয়াম, লৌহ, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি |
মাছ, মাংস, ডাল ও বিচি জাতীয় খাদ্যশ্রেণি (দেহ গঠনকারী ও ক্ষয়পূরণকারী খাদ্যশ্রেণি) | ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ডাল বাদাম ইত্যাদি | খাদ্যশক্তি, প্রোটিন, ভিটামিন বি,, ভিটামিন বি, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন-এ, আয়রন, ক্যালসিয়াম |
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যশ্রেণি (শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য শ্রেণি) | দুধ, দই, ছানা, ঘোল, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ক্ষির, পায়েস ইত্যাদি | প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ল্যাকটোজ, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি১২ |
স্নেহ বা তেল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যশ্রেণি | স্নেহ বা তেল-বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল, ঘি, মাখন ডালডা ইত্যাদি মিষ্টি-চিনি, গুড় ও মিষ্টি জাতীয় খাবার | প্রধানত ঘনীভূত শক্তির বা ক্যালরির উৎস ও চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো পাওয়া যায় |
![]() |
| ![]() |
![]() | ![]() | ![]() |
কাজ ১- তুমি গতকাল সারাদিনে যে খাবারগুলো খেয়েছ সেই খাবারগুলো কোন কোন মৌলিক খাদ্য শ্রেণিভুক্ত তা লেখো। |
আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, সেগুলোর পুষ্টিমূল্য হিসাব করার সুবিধার জন্য এবং দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি পাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিটি খাবার নির্দিষ্ট পরিমাণে পরিবেশন করা প্রয়োজন হয়। প্রতিটি খাবার পরিবেশনের জন্য যে নির্দিষ্ট পরিমাণের খাবার নির্ধারণ করা হয় তাকে এক পরিবেশন পরিমাণ খাদ্য বলা হয়। বিভিন্ন খাদ্যের জন্য এক পরিবেশন পরিমাণ ভিন্ন হয়।
১। শস্য ও শস্য জাতীয় খাদ্যশ্রেণি- শক্তি প্রদানকারী সমস্ত খাদ্যের মধ্যে শস্য ও শস্যজাতীয় খাদ্য থেকেই আমরা মোট ক্যালরির অর্ধেকের বেশি পেয়ে থাকি। আমাদের প্রতিবেলার খাবারে শস্যজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকায় চাল, গম, আলু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সরবরাহ করে।
এক পরিবেশন শস্যজাতীয় খাদ্য | |
খাদ্যের নাম | পরিমাণ |
ভাত | ১/২ কাপ |
রুটি | মাঝারি ১টা |
পাউরুটি | ১ স্লাইস |
শস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ খাদ্য গ্রহণকারীর পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে। এই শ্রেণির খাদ্য গ্রহণ ক্যালরি চাহিদার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এই শ্রেণি থেকে প্রতিবেলার খাবারে পরিশ্রমী ব্যক্তির একের অধিক পরিবেশন খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২। শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশ্রেণি উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় শাকসবজি ও ফল এই শ্রেণির খাদ্য। প্রাপ্তবয়স্ক স্বাভাবিক পরিশ্রমী ব্যক্তির দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা দরকার। প্রতিদিন তিন বেলার আহারে ৪ থেকে ৬ পরিবেশন শাকসবজি, ফল দেহের পরিপুষ্টির জন্য অপরিহার্য।
এক পরিবেশন শাকসবজি জাতীয় খাদ্য | |
খাদ্যের নাম | পরিমাণ |
কাঁচা শাকসবজি | ৫০ গ্রাম |
ফল | ৫০ গ্রাম |
প্রত্যেক পরিবেশনের পরিমাণ ভক্ষণযোগ্য কাঁচা শাকসবজি বা ফল কমপক্ষে ৫০ গ্রাম। বাকি ২ থেকে ৪ পরিবেশন অন্যান্য সবজি ও ফল থেকে গ্রহণ করা দরকার। এই শ্রেণির খাদ্য থেকে প্রতিবেলার খাবারে পরিশ্রমী ব্যক্তির একের অধিক পরিবেশন খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৩। মাছ, মাংস, ডাল ও বিচিজাতীয় খাদ্যশ্রেণি- এই খাদ্যশ্রেণি থেকে দৈনিক ৬০ থেকে ১২০ গ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা যায়। আহারে প্রোটিন বহুল খাদ্য থেকে খাদ্য পরিবেশনের পরিমাণ ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম। প্রতিদিন প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উভয় শ্রেণি থেকেই প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। দৈনিক কমপক্ষে এক পরিবেশন প্রাণিজ প্রোটিন আহারে থাকা বাঞ্জনীয়। সন্তানসম্ভবা মা, প্রাকবিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়গামী শিশুর খাদ্যে প্রাণিজ প্রোটিন অত্যাবশ্যক।
প্রোটিনজাতীয় খাদ্য পরিবেশনের পরিমাণ | |
খাদ্যের নাম | গ্রহণযোগ্য পরিমাণ |
মাছ, ছোট বা বড় | ৩০-৫০ গ্রাম |
গরু বা খাসির মাংস | ৩০-৫০ গ্রাম |
হাঁসের বা মুরগির ডিম | ১ টা |
মসুর বা অন্যান্য ডাল | ২৫ গ্রাম |
চিনাবাদাম | ২৫ গ্রাম |
৪। দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যশ্রেণি: শিশুদের জন্য এই শ্রেণির খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর পাঁচ মাস বয়স
পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধই যথেষ্ট। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক খাদ্যে দুধ অপরিহার্য নয় তবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খুবই ভালো উৎস। শিশুদের পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে বয়স অনুপাতে দৈনিক ২০০ থেকে ৬০০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন হয়। এক পরিবেশনে টাটকা তরল দুধের পরিমাণ ২০০ মিলিলিটার। বিদ্যালয়গামী শিশুরা দৈনিক কমপক্ষে এক পরিবেশন এবং বেশিরপক্ষে ২ পরিবেশন দুধ বা দুধে তৈরি খাবার গ্রহণ করলে তাদের উচ্চমানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও রিবোফ্লাভিনের চাহিদা পূরণ হয়।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য এক পরিবেশনের পরিমাণ | ||
খাদ্যের নাম | পরিমাণ | |
টাটকা তরল দুধ | ২০০ মিলিলিটার | ১ গ্লাস |
ছানা | ৫০ গ্রাম | ১/২ কাপ |
দই | ১০০ গ্রাম | ১/২ কাপ |
পনির | ২৫ গ্রাম | ২ টে. চামচ |
৫। তেল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যশ্রেণি- স্নেহ বা তেল ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খুবই কম পরিমাণে গ্রহণ করতে
হবে। কারণ এই খাবারগুলো খুব বেশি পরিমাণে খেলে খুব তাড়াতাড়ি শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। এজন্য রান্নায় যতটা সম্ভব কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করা উচিত এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
কাজ- ১ ঃ তুমি প্রতিদিন যে খাবারগুলো গ্রহণ করো সেই খাবারগুলোর এক পরিবেশন পরিমাণ উল্লেখ করো। |
সুষম খাদ্য- দেহে যে ৬টি খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন তা ৫টি শ্রেণির বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তির দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানবহুল যেসব খাদ্য যে পরিমাণে গ্রহণ করা প্রয়োজন সেই পরিমাণ খাদ্যকে সুষম খাদ্য বলা হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন খাদ্য যে পরিমাণে গ্রহণ করলে কোনো ব্যক্তির দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও পানি সরবরাহ করে। সুষম খাদ্যে কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি বা আধিক্য থাকে না। মাছডাল, ভাতরুটি, শাকসবজি ও ফল, দুধ ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির খাদ্য নিয়েই খাবার সুষম হয়।
সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় মৌলিক খাদ্যশ্রেণির ব্যবহার
১। খাবারে ৫টি মৌলিক শ্রেণির খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করে ৬টি পুষ্টি উপাদানের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়।
২। প্রত্যেক শ্রেণির খাদ্য পরিবেশন পরিমাণ জানা থাকায় খুব সহজেই পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য নির্বাচন করা যায়।
৩। দৈনিক মোট ক্যালরির ৫০% থেকে ৬০% কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাদ্য গ্রহণের জন্য শস্য ও শস্যজাতীয় খাদ্য নির্ধারিত পরিমাণ গ্রহণ করা এবং ২০ গ্রাম গুড় বা চিনি জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ করা।
৪। দৈনিক মোট ক্যালরির ২০% প্রোটিনজাতীয় খাদ্য গ্রহণ ও দেহে প্রয়োজনীয় প্রোটিেেনর চাহিদা পূরণের জন্য মৌলিক খাদ্যশ্রেণির মাছ, মাংস, ডাল ও বিচিজাতীয় খাদ্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রহণ করলে সহজেই খাদ্য সুষম হবে। এক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের পাশাপাশি কমপক্ষে এক পরিবেশন প্রাণিজ প্রোটিন নির্বাচন করতে হবে।
৫। দৈনিক মোট ক্যালরির ২০% থেকে ৩০% ফ্যাটজাতীয় খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান প্রাপ্তির জন্য দৈনিক মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ গ্রাম তেল (রান্নায়) গ্রহণ করা।
৬। ভিটামিন ও ধাতব লবণের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফল প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিবেশন নির্বাচন করতে হবে। এজন্য মৌলিক খাদ্যশ্রেণির শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশ্রেণি থেকে শাক, অন্যান্য সবজি রান্না করে এবং রঙিন সবজি রান্না করে এবং রঙিন ফল, টকজাতীয় ফল, রসাল ফল ইত্যাদি মিশ্রিত করে গ্রহণ করতে হবে।
শস্যজাতীয় খাদ্যশ্রেণি | শাকসবজি ও ফলজাতীয় খাদ্যশ্রেণি | মাছ, মাংস, ডাল ও বিচি জাতীয় সমৃদ্ধ খাদ্যশ্রেণি | দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যশ্রেণি | তেল ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যশ্রেণি |
৫টি খাদ্যশ্রেণি থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন |
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্যালরি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য, চাহিদার চেয়ে খাওয়া যাতে কম বা বেশি না হয় সেজন্য এবং অপুষ্টি প্রতিহত করার জন্য সুষম আহার গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবারের এক দিনের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা
পরিবারের সদস্যদের সুষম আহার পরিবেশনের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা করে নেওয়া উচিত। পরিবারের এক দিনের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা করার সময় মৌলিক ৫টি খাদ্যশ্রেণি থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া পরিবারের সকল বয়সের সদস্যদের জন্য উপযোগী খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। একই খাদ্য বারবার গ্রহণ করলে খাদ্য গ্রহণে অনীহা ও অরুচি তৈরি হয়, তাই একটা খাদ্যশ্রেণি থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পরিমাণ ঠিক রেখে খাদ্য নির্বাচন করলে খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র্য আসবে এবং খাদ্য সুষম হবে।
কাজ ১- পাঁচটি মৌলিক খাদ্যশ্রেণি ব্যবহার করে নিচের ছকে পরিবারে এক দিনের জন্য খাদ্য পরিকল্পনা করো |
প্রাতরাশ (সকালের নাশতা) | মধ্যাহ্ন ভোজ (দুপুরের খাবার) | নৈশ ভোজ (রাতের খাবার) |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের ভালো উৎস-
ক. মাছ
খ. দুধ ও দুধজাতীয় খাবার
গ. বাদাম
ঘ. ডাল
২. নিম্নের খাদ্যগুলোর মধ্যে কোন খাদ্য থেকে সেলুলোজ পাওয়া যায়?
ক.গরুর মাংস
খ. লাউশাক
গ. চিনাবাদাম
ঘ. ভুট্টার খই
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
১৩ বছর বয়সি নাফিস ডাল দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করে। মাছ ও মাংস খেতে চায় না বললেই চলে। দুধ কিংবা দুধজাতীয় খাবারের প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই।
৩. নাফিসের দেহে নিচের কোনটির অভাব দেখা দেবে?
ক. আয়োডিন
খ. রিবোফ্লাভিন
গ. সুক্রোজ
ঘ. স্টার্চ
৪. উদ্দীপকে উল্লেখিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে নাফিসের-
i. ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগে ভুগবে
ii. অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগবে
iii. মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হবে
নিচের কোনোটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ.i ও iii
গ.ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন :
১.
ক. বিভিন্ন ধরনের খাদ্যকে কয়টি মৌলিক শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়?
খ. দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় কেন?
গ. ১ নং চিত্রের খাদ্যগুলো থেকে আমরা কী ধরনের পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দেহের পুষ্টিসাধনে ২ নং চিত্রের খাদ্যগুলোর প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করো।
ক. দৈনিক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির খাদ্যে কতটুকু গুড় বা চিনি না থাকলে ক্যালরির ঘাটতি হয়?
খ. শস্যজাতীয় খাদ্য আমাদের দেহের মোট ক্যালরির কতটুকু পূরণ করে? বুঝিয়ে লেখো।
গ. চিত্রের খাদ্যগুলো ব্যবহার করে ১৩ বছর বয়সি একজন ছাত্রীর দুপুরবেলার খাদ্য পরিকল্পনা করো।
ঘ. চিত্রে প্রদর্শিত খাদ্যগুলো পরিবারের সকল সদস্যের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ক্যালরি সরবরাহ নিশ্চিত করে- তুমি কি একমত? সপক্ষে যুক্তি দাও।